করোনা VS ইচ্ছে
সকাল দিয়ে বিছানায় জায়গা নিয়েছি। হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়াই বড্ড খারাপ লাগছে শরীরটা। নিজেকে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে। কে জানি কেন? একে তো চারপাশের অবস্থা ভয়ঙ্কর। মারণ ভাইরাস করোনা তাঁর থাবা বসাতে ব্যস্ত। অন্যান্য দেশগুলির মতোন আমাদের দেশেও ভাইরাসের প্রভাব প্রতিপত্তি বেশ ভালো রকমের এগোচ্ছে। যদিও এতে আমাদের দেশের লোকগুলোর দোষ। কারও কথা শুনবো না, মানব না। সরকার কিছু করলে বা বললে শুনবো না। আর সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকলে! বাপ রে বাপ। লোকের খিস্তির অভাব হবে না।
এখন সালটা 2020। শুনেছি মানে বেশ কয়েকটা পোর্টাল বলুন বা অন্য কোথাও, শুনেছি নাকি প্রতি 100 বছর অন্তর এরকম মহামারী পৃথিবীর বুকে নেমে আসে তাঁর উপর জমে থাকা জীবন্ত জঞ্জালগুলোকে পরিস্কার করতে। ইতিহাস তো তাই বলে। 1920, 1820, 1720, 1662 এই প্রতিটি সালেই ভয়ঙ্কর মহামারী দেখা গিয়েছে। বলি হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ! এর উপর বেশ কয়েকটা উপন্যাসও লেখা হয়েছে, যেমন- স্টেশন 11, প্লেগ, দ্য প্যাসেজ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার আবার বেশি নাম মনে থাকে না। তাই যে কটা মনে ছিল লিখে দিলাম।
বর্তমান সময়ে বলা চলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে বিভিন্ন দেশগুলিতে মহামারীর চেয়েও ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। নাম বড্ডো অদ্ভুত করোনা ভাইরাস। আমরা বাঙালী। তাই এই ভাইরাসের নাম নিয়েও বেশ রসিকতা শুরু থেকে করে এসেছি। যাক সেসব কথা বাদ দিলাম। ভীষণ সিরিয়াস মুডে লিখছি কথাগুলো। ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম - সার্স-কোভ২। আর এই ভাইরাস মূলত মানুষের ফুসফুসে মারাত্মক রকমের ক্ষতি করে হাঁপানি এবং আরও বেশ কিছু শারীরিক অসুস্থতার মাধ্যমে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এই ভাইরাসের প্রভাব ইতিমধ্যে আমরা প্রত্যেক বিশ্ববাসী দেখে নিয়েছি। ভাইরাসের তাঁর উপর ভ্যাকসিন বের হয়নি। যার মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করা যায়। সকলের মাথায় হাত একে বারে। আরও বড় রকমের ধাক্কা হল গিয়ে, ভাইরাসটি 'মেড ইন চায়না'। আসল কথাটাই এত পড়ে গিয়ে বলছি। ভাইরাস মেড ইন চায়না মানে হল গিয়ে, 2019 সালের ডিসেম্বরের শেষ থেকে প্রথম চীনের উহান শহরে নাকি এই ভাইরাসের সংক্রমণ, প্রভাব দুটোই লক্ষ্য করা যায়। তখন কেউ পাত্তা দেয়নি সেভাবে ঠিকই কিন্তু ভাইরাসের প্রভাব আস্তে আস্তে ইতালি, ইরান, স্পেনের দরজা ধাক্কালে সেখানে মুহূর্তের মধ্যে সাজানো স্বপ্নপুরীগুলো যেন মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হয়ে গেল। শুরুতে অনেক তথ্য সামনে আসে, নাকি বাঁদুর বা অন্য কোনও পশুর থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। চীন তো আবার সবই খায়। মাগো! পারলে জ্যান্ত মানুষও খেয়ে ফেলে। ইশ! তবে অনেকের কাছে এই ভাইরাস আবার চীনের তৈরি বায়োলজিকাল অস্ত্র। বায়োলজিকাল হোক বা ন্যাচারাল বোথ স্টেটস ওয়ান থিঙ, দিস ভাইরাস ইস মেড ইন চায়না। এর আগে 2002 সালে সার্স-কোভ১ এর সংক্রমণও চীনে ঘটেছিল। 70 হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় তাতে। তবে চীনের কোনও জিনিস একে বেশি দিন টেকে না সে হেডফোন হোক, ব্লুটুথ স্পিকার বা মোবাইল ফোন! এই দেখুন জানুয়ারি মাসে দাম দিয়ে একটা হেডফোন কিনেছিলাম। মেড ইন চায়না ছিল। মার্চ পড়তে না পড়তেই ইতি টেনে দিল নিজের! তা বুঝি না যে দেশের তৈরি জিনিসপত্রের ভ্যালিডিটি এত কম, সেই দেশের ভাইরাসের প্রভাব এত বেশি কিভাবে হতে পারে!
বাদ তো আমাদের দেশও যাচ্ছে না। প্রথমে সবাই খুব মজা নিচ্ছিল। এখনও নিচ্ছে অনেকে কিন্তু আবার অনেকে সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন বাড়িতে বসে থেকে। অবস্থা দিনের পর দিন যেন খারাপের দিকে এগোচ্ছে। তার উপর বেশ কয়েকদিন ধরে কেমন হঠাৎ করে হওয়া মাথা ব্যাথা, বুকে ব্যাথা আবার আজ সকাল দিয়ে বিছানায় পরে থাকা লক্ষণ যে ভালো ঠিকছে না। না না করোনা নয়। মনের ব্যামো ধরেছে। নিজের বন্ধুগুলোকে যে ২ সপ্তাহ ধরে দেখতে পারছিনা। ভিডিও কলিংয়ে মন ভরাতে হচ্ছে দেখে। কতদিন হল গিয়ে সিগারেট টানিনা। মনটা হাঁসপাস করছে কেমন! চোখের সামনে বেশ কতগুলো স্মৃতির জমাট দেখতে পাচ্ছি। অফিস শেষে দুই বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে এসপ্লানেডের কাছে ট্রাম লাইনে বসে আড্ডা দেওয়া। একে তাকে খিস্তি করা, কাউন্টারে সুট্টা, একরাশ মন খারাপের কথা বলা। আমার ব্রেক-আপ নিয়ে তাদের মুভ অন করতে বলা। ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আড্ডা মারা, টেবিল বাজিয়ে গান, বাওয়াল। আবার মায়নে পাওয়ার পর একসাথে মিলে বারে গিয়ে সুরা পান। সেই সঙ্গে তাদের আমার নতুন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে পরামর্শ দেওয়া। সবই খুব মনে পড়ছে। একই সঙ্গে মনে পড়ছে সেই মানুষটাকে যার সঙ্গে গতকালই ব্রেক আপ করেছি। কারণগুলো ব্যক্তিগত। আমি নিজেই তাকে সব পরিষ্কার করে গুছিয়ে বলে উঠতে পারিনি। তবে তাঁর কথা বলা, আদর করা, সময় হলে দূরে সরিয়ে রাখা, মনমালিন্য, রাগ, অভিমান সবই কিরকম ভাবে মনে পড়ছে। কে জানে এদের সঙ্গে কবে দেখা হবে! দেখা হবেও কি আদৌ এই ভেবে দিন কাটাচ্ছি। ভাইরাসের জেরে চারিদিকে লক-ডাউনের পরিস্থিতি একে। তাও বেশ কয়েকজন আক্রান্ত মানুষ সেসব কিছু উপেক্ষা না করে নিজেদের মতোন ভাইরাস ছড়ানোর কাজ দায়িত্ব নিয়ে করে চলেছেন। ভাবছেন না পরিণতি কি মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু এই আমি, আপনি, আমরা ভাবছি। এক রকম স্বার্থপরের মতোন করেই। কারণ আমরা নিজেদের এই কাছের আর অত্যন্ত ভালোবাসার মানুষগুলিকে হারাতে খুবই ভয় পাই। বাড়িতে থেকে বাবা মা যতটা পারা যায় সুরক্ষিত রাখতে সেটা তো করছি সেই সঙ্গে পাশাপাশি এই চিন্তাও ভাবাচ্ছে কাছের ওই বন্ধুগুলো, আমার ভালোবাসার মানুষটা ওদের পরিবার আত্মীয় স্বজন সবাই ঠিক আছে তো! কারও কিছু হবে না তো! যেন সমাজটাকে ঠিক রাখার দায়িত্ব এই আমি, আপনির মতোন সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলা মানুষগুলো নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছি যাতে হাসপাতালে আর কোনও রুগী এই সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি না হয়। যাতে সেখানেও আরও কটা মানুষ সুরক্ষিত থাকে। জানিনা আগামী এক সপ্তাহ আমাদের কীরকম ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চলেছে। জানিনা হয়তো আগামী সপ্তাহে আমি বা আপনি কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হব কিনা! তবে মনের অনেক গভীরে নিজের কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে একটা মুহূর্ত কাটানোর ইচ্ছেটা রয়ে যাবে। সব ইচ্ছে পুরো হবে কি না সবটাই এখন ভীষণ অনিশ্চিত। সবশেষে ভাইরাস জিতবে নাকি আমাদের মনের এই অদম্য ইচ্ছেগুলো সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Comments
Post a Comment